তামিল ভাষার বর্ণমালা সম্পর্কে জানতে চান তাদের জন্যই মূলত আমাদের আজকের এই লেখাটি। এই লেখাটিতে আমরা তামিল ভাষার বর্ণমালার ইতিহাস, এটি কোথায় থেকে এসেছে, এর উপভাষাসমূহ কি কি, অক্ষর তালিকাটি ঠিক কেমন সবকিছু নিয়েই আজ আমাদের লেখাটিকে সাজানো হয়েছে। আশা করি পুরো আর্টিকেলটি আপনাকে পুরোনো এই ভাষাটি সম্পর্কে জানতে এবং বুঝতে সেই সাথে তামিল ভাষার বর্ণমালা আয়ত্ত করতে সাহায্য করবে।
তামিল ভাষার সম্পূর্ণ পরিচিতি
তামিল ভাষার বর্ণমালা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়ার আগে চলুন এই ভাষাটি সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে নেওয়া যাক। ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং শ্রীলঙ্কায় মূলত সরকারি বা জাতীয়ভাবে এই তামিল ভাষা ব্যবহৃত হয়। মূলত তামিল ভাষা হলো একটি দ্রাবিড় ভাষা অংশবিশেষ ভাষা। যার জন্ম হয়েছে সরাসরি তামির জাতি থেকে।
আর আপনি যদি জানতে চান তামিল ভাষা বিশ্বের কোন কোন দেশে চলে, সেক্ষেত্রে বলবো তামিল ভাষা বর্তমানে ভারত এবং শ্রীলঙ্কার পাশাপাশি সিঙ্গাপুর এবং মালেশিয়ার কিছু কিছু অংশেও প্রচলিত রয়েছে। এক্ষেত্রে এসব স্থানে মূলত ১ ধরণের তামিল ভাষা প্রচলিত রয়েছে এবং এটি হলো আধুনিক তামিল ভাষা। বলে রাখা ভালো তামিল ভাষা কিন্তু দুই ভাগে বিভক্ত! এর একটিকে বলা হয় আধুনিক তামিল এবং অন্যটিকে বলা হয় পুরোনো কিংবা ওল্ড তামিল। বর্তমানে সারা পৃথিবীতে পুরোনো তামিলের চাইতে আধুনিক তামিলের প্রচলন সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যায়।
তামিল ভাষা সারা পৃথিবীর ভাষা পরিবারের কাছে এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, এটি একদিকে যেমন উত্তর ও উত্তর-পূর্ব শ্রীলঙ্কার প্রধান ভাষা হিসাবে কাজ করছে ঠিক তেমনি অন্যদিকে একটি ভারতের গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভাষাগুলির একটি হিসাবে প্রচলিত অবস্থায় আছে। যার ফলে এসব অঞ্চলে পড়াশোনা, চাকরি কিংবা ভাষাটি নিয়ে গবেষণা করার ক্ষেত্রে প্রয়োজন পড়ছে তামিল ভাষার বর্ণমালা সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা এবং একই সাথে এই ভাষা সম্পর্কিত টুকটাক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
তামিল ভাষার অতীত ইতিহাস
তামিল ভাষার বর্ণমালা সম্পর্কিত আজকের আর্টিকেলের এই অংশে আমরা জানবো তামিল ভাষার পুরোনো ইতিহাস সম্পর্কে। মূলত তামিল ভাষার প্রচলন শুরু হয় সেই ৭০০ সালের দিক থেকে। শুরুতে এটি ছিলো ব্রাহ্মী লিপির একটি অংশ। পরবর্তীতে এটি তামিল ভাষা হিসাবে স্বাধীনভাবে ব্যবহৃত হতে শুরু করে।
আপনি কি জানেন, এই তামিল ভাষা ব্রিটিশ অঞ্চলের বেশকিছু অংশেও প্রচলিত রয়েছে? এর মূল কারণ হলো ভারতে ব্রিটিশ শাসনের সময় বেশকিছু তামিল ভাষায় কথা বলা শ্রমিককে ব্রিটিশ অঞ্চলে নিয়ে যাওয়া হয়। উদ্দেশ্য কাজ করিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করা। আর এই সুযোগ তামিলভাষীরাও প্রয়োজনের তাগিদে মাঝেমধ্যে কিংবা পুরো সময়টাতে তামিল ভাষায় কথা বলা শুরু করে।
ধীরে ধীরে আশেপাশের মানুষের কাছে কৌতূহলের বিষয় হয়ে উঠে এই তামিল ভাষা এবং তামিল ভাষার বর্ণমালা। এরই রেশ ধরে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলি অর্থ্যাৎ সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, মরিশাস ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশগুলিতে বেশ বড় আকারের তামিলভাষী সম্প্রদায় গড়ে উঠতে শুরু করে।
তামিল ভাষার প্রতিটি বর্ণ কিংবা শব্দ সেই শুরু থেকেই শব্দীয বর্ণমালা লিপিতে লেখা হয়ে থাকে। যা সাধারণত বাংলা কিংবা ইংরেজি ভাষার মতো বাম থেকে ডানে লিখতে হয়। যাইহোক! তামিল ভাষার বর্ণমালা বিস্তারিত তথ্য আমরা আজকের এই আর্টিকেলটির পরবর্তী অংশে বিস্তারিত আলোচনা করবো। সুতরাং আমাদের সাথেই থাকুন।
তামিল ভাষার বর্ণমালা পরিচিতি
তামিল ভাষার বর্ণমালা পরিচিতি সম্পর্কে আলোচনা করার আগে শুরুতেই বলে রাখি এটি কিছুটা তেলেগু ভাষার বর্ণমালার মতো। সুতরাং যারা তেলেগু ভাষা কিছুটা হলেও জানেন, তাদের তামিল ভাষা রপ্ত করতে খুব একটা সময় লাগবে না। বিশেষ করে তামিল ভাষাকে প্রাথমিকভাবে বোঝার ক্ষেত্রে এই তেলেগু ভাষার প্রতি আগ্রহ কিংবা জ্ঞান কিছুটা হলেও সাহায্য করবে।
বাংলা ভাষার বর্ণমালার মতো তামিল ভাষার বর্ণমালাতেও রয়েছে স্বরবর্ণ, ব্যাঞ্জনবর্ণ, কার কিংবা সাধারণ সংখ্যা। মূলত যারা তামিল ভাষাকে নিজেদের জাতীয় ভাষা হিসাবে ব্যবহার করে থাকে তাদের বলা হয় তামিল জাতি। বিশ্বে এই তামিল ভাষায় কথা বলা মানুষের সংখ্যা কিন্তু নেহায়েত কম নয়। গবেষণা থেকে জানা যায় পৃথিবীর প্রায় ৭০ কোটি মানুষ এই তামিল ভাষায় কথা বলে কিংবা ভাষাটিকে ব্যবহার করে থাকে। এর মাঝে আবার ৮ মিলিয়ন মানুষ তামিল ভাষাকে দ্বিতীয় ভাষা হিসাবে ব্যবহার করে থাকে।
তামিল ভাষার অক্ষর: তামিল ভাষার বর্ণমালা
তামিল ভাষার বর্ণমালায় থাকা অক্ষরগুলিকে আমরা সাধারণত ২ টি ভাগে ভাগ করতে পারি। একটি হলো ব্যাঞ্জনবর্ণ এবং অপরটি হলো স্বরবর্ণ। ঠিক বাংলা ভাষার বর্ণমালার মতোই।
যাইহোক! এক্ষেত্রে তামিল ভাষার বর্ণমালা সম্পর্কিত কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ অক্ষর নিচে দেওয়া হলো। আশা করি পুরোটা বুঝতে সুবিধা হবে:
তামিল বর্ণমালায় ব্যবহৃত প্রথম ব্যাঞ্জনবর্ণটি হলো க। যাকে কিনা বাংলাতে ক বরা হয় এবং ইংরেজিতে Ka। ঠিক তেমনই তামিল ভাষার বর্ণমালায় ব্যাঞ্জনবর্ণের ঠিক শেষের অক্ষরটি হলো ஹ। আর এই ஹ বলতে বাংলা ভাষার হ’কে বোঝানো হয়ে থাকে।
তবে তামিল ভাষার বর্ণমালা বিষয়ে সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হলো বাংলা ব্যাঞ্জনবর্ণের হ পর্যন্তই এই বর্ণমালার দৌঁড়। অর্থ্যাৎ হ এর পর আমরা বাঙালিরা যেসব অক্ষর ব্যবহার করে থাকি সেসব অক্ষরের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোনো অক্ষর নেই তামির ভাষার বর্ণমালা লিষ্টে।
এছাড়াও আমরা বাংলাতে যে ল ব্যবহার করি তামিলভাষীরা সে ল টিকে একসাথে ৩ ভাবে ব্যবহার করতে পারে। যেমন ள, ழ কিংবা ள। তবে শব্দ অনুযায়ী এসব অক্ষর ব্যবহারের তারতম্য ঘটতে পারে। যা কিনা আপনাকে তামিল ভাষার বর্ণমালা শেখাকালীন সময়ে সচেতনতার সাথে ব্যবহার করতে হবে।
তামিল ভাষার কার: তামিল ভাষার বর্ণমালা
আমরা বাংলা ভাষার বর্ণমালায় যেমন বিভিন্ন কার ব্যবহার করে থাকি, তামিল ভাষার বর্ণমালার ক্ষেত্রেও তেমনকিছু কারের ব্যবহার রয়েছে। যা তামিল ভাষার অক্ষরগুলি আরো অর্থবহভাবে ব্যবহার করতে সাহায্য করে থাকে। আর্টিকেলের এই অংশে আমরা তামিল ভাষার কার সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো।
বাংলা স্বরবর্ণ থেকেই মূলত আমরা বিভিন্ন কার পেয়েছি কিংবা কার সম্পর্কে ধারণা পেয়েছি। যেমন বাংলায় আ অক্ষরটি থেকেই কিন্তু া-কারটি এসেছে। ঠিক তেমনই তামিল ভাষার বর্ণমালায়ও বিভিন্ন কারের ক্ষেত্রে সাহায্য নেওয়া হয়েছে ভাষাটির বিভিন্ন স্বরবর্ণে।
যেমন এই ভাষাটিতে ா বলতে া-কার বোঝানো হয়। আর এই ா এসেছে আরেকটি স্বরবর্ণ ஆ থেকে। যাকে আমরা বাংলায় কনভার্ট করলে পাবো আ। তবে মজার ব্যাপার হলো তামিল ভাষার বর্ণমালার এই ஆ কিংবা அ অর্থ্যাৎ আ কিংবা অ কিন্তু আকারগত কিংবা দৃশ্যগত দিক দিয়ে আমাদের স্বরবর্ণ আ এবং অ এর মতোই!
তামিল ভাষার সংখ্যা: তামিল ভাষার বর্ণমালা
এবার আসি তামিল ভাষার বর্ণমালা সম্পর্কিত আর্টিকেলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ তামিল ভাষার সংখ্যার ব্যাপারে।
শুরুতেই বলে রাখি বাংলায় সংখ্যা শূন্যকে আমরা যেমন ০ লিখি তামিলভাষীরাও ঠিক তেমনই ௦ লিখে থাকে। একইভাবে ক্রমান্বয়ে ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, ১০, ১০০, ১০০০ সংখ্যাগুলিকে তামিল ভাষায় বলা হয় ௧, ௨, ௩, ௪, ௫ ௬, ௭, ௮, ௯, ௰, ௱ এবং ௲।
ইতি কথা
মনে রাখবেন, আপনি যদি তামিল ভাষার বর্ণমালার পরিচিতি সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত থাকেন সেক্ষেত্রে তামিল ভাষা শেখা কিংবা রিসার্চ করাটা সহজ হয়ে যাবে না। কারণ তামিল ভাষা শেখা বা এটা নিয়ে রিসার্চ করার ক্ষেত্রে এর বর্ণমালাগুলি মূল উপকরণ হিসাবে কাজ করে। আর আপনি যদি কোনোকিছুর মূল তথ্য বা কিংবা শিকড় সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন সেক্ষেত্রে সে ব্যাপারটি আপনার কাছে সহজ হতে কোনো সমস্যাই হবে না। তামিল ভাষার বর্ণমালা সম্পর্কে জানতে পেরে কিছুটা হলেও উপকৃত হয়েছেন, এমনটা আশা রেখে আজকের লেখার ইতি টানছি।