জেনে নিন আরবি ভাষা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য

আরবি ভাষা সম্পর্কে বিস্তারিত

একজন মুসলিম কিংবা একজন সৌদি প্রবাসী অথবা সে দেশে স্কলারশিপ পাওয়া শিক্ষার্থী হিসাবে অনেকেরই এই আরবি ভাষা শেখার প্রয়োজন পড়তে পারে। তবে যেকোনো ভাষা শেখার আগে সে ভাষা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলি জেনে নেওয়া উচিত। আজকের আর্টিকেলে আমরা আরবি ভাষা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নেওয়ার চেষ্টা করবো। যেখানে থাকবে এই ভাষার ইতিহাস, প্রচলন, জনপ্রিয়তাসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে পরিপূর্ণ একটি আলোচনা। সুতরাং যারা মিস করতে চান না তারা পুরো আর্টিকেলটির সাথে থাকার চেষ্টা করবেন।

আরবি ভাষার সঠিক পরিচিতি

আরবি ভাষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিচয় হলো এটি কুরআনের ভাষা। এটি মূল সেমেটিক ভাষা পরিবারের একটি সদস্য ভাষা। মূলত সেমেটিক ভাষা পরিবারের বেশকিছু ভাষা বর্তমানে প্রায় বিলুপ্তির পথে রয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত বেশ আগ্রহের সাথেই ব্যবহৃত হচ্ছে এই আরবি ভাষা। 

আপনি জেনে অবাক হবেন আরবি ভাষার রয়েছে ২৭ রকমের উপভাষা। যার কারণে আরবি ভাষাকে অনেকসময় ম্যাক্রো ভাষাও বলা হয়ে থাকে। আরবি ভাষার যে এতোগুলি উপভাষা রয়েছে, তার প্রমাণ কিন্তু বিভিন্ন ক্যাটাগরির আরবি ভাষার দিকে তাকালেই বোঝায়। আরব দেশগুলির বেশিরভাগ দেশই এসব উপভাষাকে ভাগভাগি করে ব্যবহার করছে। 

আধুনিক প্রমিত আরবি হলো আরবি ভাষার আধুনিক রূপ৷ যা বিভিন্ন রাষ্ট্রের সরকারি ভাষা হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিভিন্ন দেশে এই ভাষাকে সরকারি ভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হলেও অনেক দেশ এটিকে সংখ্যালগু ভাষা হিসাবেও ব্যবহার করছে। যেহেতু ইসলাম ধর্মে এই ভাষার গুরুত্ব অন্যান্য ভাষার চাইতে যথেষ্ট বেশি, সেহেতু ইসলামিক দেশগুলির কাছে বেশ জনপ্রিয়তার সাথেই সম্মানিত হয়ে রয়েছে এই ম্যাক্রোভাষাটি। 

আরবি ভাষা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য 

আরবি ভাষার পরিচিতি সম্পর্কে তো জানলেন! তবে আপনি কি আরবি ভাষা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যগুলি সম্পর্কে কোনো ধারণা রাখেন? যদি এসব তথ্যের কোনোটিই আপনার জানা না থাকে সেক্ষেত্রে আজকের আর্টিকেলের এই অংশটিতে ফোকাস করতে পারেন!

আজকের যে আরবি ভাষার সাথে আমরা পরিচিত সেই আরবি ভাষাকে বলা হয় আধুনিক আদর্শ আরবি। আর এই ভাষাটিকেই পুরো ইসলাম ধর্মের জগতে ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন ধর্মীয় লেখালেখিতে এই আদর্শ কুরানিক আরবি ভাষাই হয়ে উঠে যোগাযোগ করবার অন্যতম মাধ্যম। 

বাংলা ভাষার বিভিন্ন পরিবর্তন কিংবা সংশোধনসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ে যেমন বাংলা একাডেমি বিভিন্ন ভুমিকা পালন করে থাকে, আরবি ভাষার ক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট কতৃপক্ষ সকল দায়িত্ব পালন সক্রিয় থাকে। 

তবে এটি যেহেতু আন্তজার্তিক ভাষার মতোই সমান গুরুত্বপূর্ণ সেহেতু এর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বেশ বড়। যেমন মিশরের কায়রোর ভাষা একাডেমি, আল-জাজিরা, সৌদি আরব, সিরিয়ার দামাস্কের আরবি একাডেমিসহ অন্যান্য বেশকিছু সংস্থা এই ভাষাটির রক্ষণাবেক্ষণে কাজ করে থাকে। 

আরবি ভাষার যে লিখন পদ্ধতি রয়েছে সেই লিখন পদ্ধতিকে আরবি লিপি বলা হয়ে থাকে। বলে রাখা ভালো অনেক গবেষকরাই মনে করেন এই আরবি ভাষার সাথে হিব্রু ও আরামীয় ভাষার বেশ মিল রয়েছে। সুতরাং এই দুই ভাষার বেশকিছু শব্দাবলি কিংবা অক্ষর আরবি ভাষায়ও খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। সবমিলিয়ে একটি সমৃদ্ধ ভাষা হিসাবে আরবি ভাষাকে একেবারে প্রথম সারিতে রাখা যেতে পারে। 

আরবি ভাষার পুরোনো ইতিহাস 

আরবি ভাষা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনায় যদি আরবি ভাষার পুরোনো ইতিহাসকে না রাখা হয়, তবে কি সেই আলোচনা পূর্ণতা পাবে? নিশ্চয় না! 

আরবি ভাষার সৃষ্টি কবে, কিভাবে হয়েছে তা সঠিকভাবে জানা যায়নি! তবে আরবি ভাষাকে আফ্রো-এশীয় ভাষা পরিবারের ভাষা হিসাবে ধরে নেওয়া হয়। যা এসেছে এই পরিবারের কেন্দ্রীয় সেমেটিক আরবি ভাষা থেকে। 

আর যদি এই ভাষার উদ্ভব সম্পর্কিত কোনো স্থান সম্পর্কে জানতে চান সেক্ষেত্রে আরব রাজ্যের মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার কথা বলবো। কারণ এই স্থানগুলিতেই আরবি ভাষার উদ্ভব ঘটেছে। 

অধিকাংশ ভাষাবিদ এবং গবেষকেরা একমত হয়েছেন যে শুরুতে আরব উপদ্বীপেই আরবি ভাষার জন্ম হয় এবং সেই সময়টা ঠিক ইসলাম ধর্ম আবির্ভাবের পূর্বে। যদিও স্থানটিতে পূর্ব থেকেই মধ্য আরব ভাষা প্রচলিত ছিলো। অন্যদিকে বর্তমানে আমরা যে আরবি ভাষা ব্যবহার করছি এবং আরব দেশগুলিতে ব্যবহৃত হচ্ছে সে ভাষাটিকে আধুনিক আদর্শ আরব ভাষা বলা হয়ে থাকে। 

আর আরব ভাষার সমৃদ্ধ ইতিহাস সম্পর্কে যদি আপনার জানার আগ্রহ থাকে সেক্ষেত্রে বলবো এই ভাষাকে পূর্বে পৃথিবীর মানসম্মত ভাষাগুলির একটি হিসাবে বিবেচনা করা হতো। মূলত সে কারণেই হয়তো গ্রিক ভাষার বহু প্রাচীন বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক লেখাকে আরবি ভাষায় অনুবাদ করতে গিয়ে এতোটুকু দ্বিধাবোধ করেননি সংশ্লিষ্টজনেরা। 

সে-সময় শুধুমাত্র আরব দেশের মানুষকেই নয়, এই আরবি ভাষা পুরো বিশ্বকে মুগ্ধ করতে সক্ষম হয়েছিলো। এই মানসম্মত ভাষার সাথে আবার যুক্ত হয়েছিলো প্রাক-ইসলাম যুগের শ্রেষ্ঠ আরব কবিদের জনপ্রিয় লেখাগুলি। 

আরবি ভাষার লিখন পদ্ধতি 

আপনি কি আরবি ভাষার লিখন পদ্ধতি সম্পর্কে জানেন? পুরোটা জানেন কিংবা আংশিক, তবে আপনি যে এই ভাষার লেখার দিক-সম্পর্কিত নিয়ম সম্পর্কে জানেন, সে-ব্যাপারে আমি পুরোপুরি নিশ্চিত। আরবি লিপি লেখার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট বা নিয়ম হলো ডান দিক থেকে বাম দিকে লেখা। 

পাশাপাশি জানিয়ে রাখা উচিত এই ভাষার বর্ণগুলিকে আরবভাষীগন হরফ বলে থাকে। আরবি ভাষায় প্রায় ২৯ টির মতো ব্যাঞ্জণ হরফ রয়েছে। আর স্বরধ্বনির ক্ষেত্রে আরবি ভাষায় কেবল দীর্ঘ স্বরধ্বনিই ব্যবহারের নির্দেশ রয়েছে। 

প্রতিটি আরবি হরফের কিন্তু আলাদা আলাদা রূপ রয়েছে। যা ব্যবহারের সময় আলাদা আলাদাভাবে ব্যবহার করতে হয়। আর এই ব্যবহারের ধরণটি নির্ভর করবে আপনার লেখা শব্দগুলির উপর। যাইহোক! আরবি ভাষার কোনো একটি লেখা লক্ষ্য করবেন, দেখবেন এই ভাষার লেখাগুলির প্রতিটি শব্দ একে-অপরের বেশ কাছাকাছি করে লেখা হয়। মূলত এটি আরবি ভাষার লিখন পদ্ধতির আরো একটি পয়েন্ট। কারণ আরবি ভাষায় বাক্য শেষ না হওয়া পর্যন্ত পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে লিখতে হয়। 

আরবি ভাষার জনপ্রিয়তা

ইংরেজির পর সারাবিশ্বে আরবি ভাষাকেই বেশ গুরুত্বের সাথে ব্যবহার করা হয়। কারণ পৃথিবীতে বর্তমানে ইসলামিক দেশগুলি এবং মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষজনের সংখ্যা বেশি। যেহেতু আরবি ভাষাতেই পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কুরআন শরীফকে লেখা হয়েছে সেহেতু এই ভাষা মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভাষা হিসাবে বিবেচিত হয়। তাছাড়া যারা এই গ্রন্থটিকে নিয়ে গবেষণার কাজে নিয়োজিত আছে তারাও আরব ভাষার সাথে পরিচিত!

অন্যদিকে বিশিষ্ট ব্যাক্তি হযরত মোহাম্মদ সাঃ এর মাতৃভাষা হিসাবেও এই ভাষা নিয়ে অনেকেই রিসার্চ করে। অনেকেই আবার আত্মস্থ করতেও দ্বিধাবোধ করে না৷ সেই প্রাচীনকাল থেকেই আরব সভ্যতার অংশ হিসেবে যারা যোগদান করেছিলো তারা স্বভাবতই আরব ভাষায় নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে এবং এই ভাষা ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। আবার আরব দেশ থেকে বিতাড়িত হওয়া বেশকিছু জাতিও এই আরবি ভাষাকে ছড়িয়ে দিতে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছে। 

আজই নয়! বরং বহুবছর আগে থেকেই আরবি ভাষা জনপ্রিয়তা ছিলো দেখার মতো। এই যেমন ধরুন ১১শ শতকে মনুষ্য জ্ঞানভাণ্ডারের বাহক ভাষা হিসাবে ব্যবহার করা হতো আরবি ভাষাকে। আবার প্রাক-ইসলামিক যুগে আরব কবিদের লেখায় মাতাল হয়েছিলো পুরো বিশ্ব। আর সেসব লেখায় ভাষা হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছিলো এই আরবি ভাষাটিই!

 

ইতি কথা

চেষ্টা করেছি আরবি ভাষা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার। আশা করি ইসলামী বিশ্বের সর্বত্র পড়া ও লেখা এই ভাষাটি সম্পর্কে আপনারা প্রয়োজনীয় সকল তথ্য এক আর্টিকেলের মাধ্যমেই জেনে নিয়েছেন। তবুও যদি কোনো প্রশ্ন থেকে থাকে তবে তা সরকারি কমেন্টবক্সে জানিয়ে দিতে পারেন৷ আর যারা এখনো এই ভাষাটি শেখা শুরু করেননি তারা আমাদের ওয়েবসাইট চোখ রাখতে পারেন। কারণ আরবি ভাষা সম্পর্কিত আরো বেশকিছু আয়োজন থাকছে এই ওয়েবসাইটের পরবর্তী কার্যক্রমে। আশা করি ভালো লাগবে। 

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *