সংস্কৃত ভাষার ইতিহাস সম্পর্কিত সকল অজানা তথ্য 

সংস্কৃত ভাষার ইতিহাস সম্পর্কিত সকল অজানা তথ্য

সংস্কৃত ভাষা মানেই ইতিহাস আর আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। বিশেষ করে যারা নতুন ভাষা শিখতে পছন্দ করে, পুরোনো ভাষার ইতিহাস সম্পর্কে জানতে চায়, ভাষার উৎপত্তিস্থল নিয়ে গবেষণা করতে চায়, ভাষার প্রতি আলাদা আগ্রহ কাজ করে তাদের ক্ষেত্রে তো সংস্কৃত ভাষা মানেই নতুন কিছু শেখার প্রেরণা এবং সুযোগ। চলুন তবে আজ এই সংস্কৃত ভাষার ইতিহাস, পরিচিতি, ব্যবহার এবং বর্তমানে এই ভাষার পরিস্থিতি ঠিক কেমন সে-সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

সংস্কৃত ভাষার পরিচিতি

নাম শুনেই কিংবা টপিক দেখেই হয়তো বুঝে গেছেন এটি একটি বেশ পুরোনো ভাষা। যার সাথে বাংলা ভাষারও বেশ কিছুটা মিল খুঁজে পাওয়া যায়। সংস্কৃত ভাষাকে গবেষণার দিক দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার প্রাচীন ইন্দো-আর্য ভাষা হিসেবে ধরে নেওয়া যায়। 

বর্তমানে ভাষাটি ভারতে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। শুধু জনপ্রিয়তাই নয়! বরং এই ভাষাটি বর্তমানে ভারতের ২২ টি সরকারি ভাষার মধ্যে অন্যতম ১ টি সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃত পেয়েছে। 

আপনি যদি শব্দগত কিংবা অর্থগত দিক দিয়ে সংস্কৃত ভাষার পরিচিতি জানতে চান সেক্ষেত্রে বলবো সংস্কৃত শব্দটির অর্থ হলো “সজ্জিত, চাষিত কিংবা শুদ্ধ”। এটি কিন্তু একটি প্রাচীন ইন্দো-আর্য ভাষা। যাকে সবচেয়ে প্রাচীন নথি হিসেবে বেদ বলা হয়। আবার অনেকের মতে এই ভাষাটিকে বৈদিক সংস্কৃত ভাষাও বলা হয়

বলে রাখা ভালো এই বৈদিক সংস্কৃত ভাষায় লেখা নথিগুলি ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তরের মধ্যভূমি এবং পূর্বের অঞ্চলগুলিতে পাওয়া গিয়েছিলো। যা বর্তমানে ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করতে এবং পরবর্তী প্রজন্মের সাথে ভাষাটিকে পরিচিত করিয়ে দিতে সংগ্রহ করা হয়েছে। 

সংস্কৃত ভাষার ইতিহাস 

এবার আসি আমাদের আজকের আর্টিকেলের মূল অংশ সংস্কৃত ভাষার ইতিহাসের ব্যাপারে। অনেকেই হয়তো বুঝতেই পেরেছেন প্রাচীন এই ভাষাটির ইতিহাস ঠিক কতটা সমৃদ্ধ হতে পারে। তবুও আপনার এই বোধশক্তিকে আরো বাড়িয়ে তুলতে আমাদের আর্টিকেলের এই সংস্কৃত ভাষার ইতিহাস” শীর্ষক অংশটিতে ফোকাস করতে পারেন। 

বহুদিনের ইতিহাসে এই সংস্কৃত ভাষাটিকে দেবনাগরী লিপি বলা হতো এবং এখনো বলা হয়ে থাকে। গবেষণা বলছে উপমহাদেশের বিভিন্ন আঞ্চলিক লিপিতে এই সংস্কৃত ভাষাকে তুলে ধরা হয়েছে। যেমন উত্তরের শারাদা অর্থ্যাৎ কাশ্মীরের বিভিন্ন গ্রন্থে, পূর্বে বাংলা অর্থ্যাৎ বাঙালির বিভিন্ন প্রাচীন গ্রন্থে, ভারতের পশ্চিমের গুজরাটিতে, ভারতের দক্ষিণের বিভিন্ন লিপিতে, বিভিন্ন গ্রন্থ বর্ণমালাতে ব্যবহৃত হয়েছে এই সংস্কৃত ভাষা। 

বলে রাখা ভালো সংস্কৃত ভাষার উপর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তৃত পরিসরে আলোচনা করা হয়েছে। বিশেষ করে বিভিন্ন ঐতিহাসিক লেখালেখির ক্ষেত্রে এই ভাষাটিকে ব্যবহার করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বৈদিক গ্রন্থের দিকে তাকালেই পুরো ব্যাপারটি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়। বেশিরভাগ বৈদিক গ্রন্থই কিন্তু সংস্কৃত ভাষার সাহায্য নিয়ে লেখা হয়েছে। 

এছাড়াও ইতিহাসে উপমহাদেশের বিভিন্ন নাটক এবং কবিতাতে ভাষাটিকে ব্যবহার করা হয়েছে। যদিও এসব নাটক প্রকাশের তারিখ, আয়োজনের সময় কিংবা নির্মাতাদের পরিচিতি অথবা নাট্যকারের পরিচিতি সম্পর্কে ইতিহাসের কোথাও খুব একটা তথ্য দেওয়া নেই। 

তবে ইতিহাসে সংস্কৃত ভাষায় লেখা “স্বপ্নবাসবদত্ত” নামের একটি রচনার গ্রন্থের খোঁজ পাওয়া যায়। জানা যায় এই বইটি লিখেছিলেন কালিদাস নামের এক লেখক। যা লেখা হয়েছিলো খ্রিস্টপূর্ব ১ম শতাব্দী থেকে ৪র্থ শতাব্দীর কোনো একটি সময়ে। এছাড়াও সে-সময় কালিদাস এই সংস্কৃত ভাষায় শকুন্তলা, কুমারসম্ভব, রঘুবংশসহ ইত্যাদি রচনা সৃষ্টি করেছিলেন। 

শুধু তাই নয়! একটা সময় পাণিনি দ্বারা রচিত হয়েছিল সংস্কৃত ভাষার ব্যকরণ নিয়ে সাজানো গ্রন্থ অষ্টাধ্যায়ী। এতে সংস্কৃত ভাষার ভিন্ন একটি ব্যকরণগত দিককে তুলে ধরা হয়েছে। যা কোনো সদ্য সংস্কৃত শিখিয়েকে পুরোপুরি ঘায়েল করতে সক্ষম।

একটু লক্ষ্য করলেই দেখবেন সংস্কৃত ভাষা কিন্তু কাঠামোগত দিক দিয়ে কিছুটা আদি ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা যেমন গ্রীক ও ল্যাটিনের মতো। বিশেষ্য, সর্বনাম এবং বিশেষণ সহ ভাষাটির ব্যকরণে রয়েছে বাড়কি বৈচিত্র্য। ভাষাটিতে পুংলিঙ্গ, স্ত্রীলিঙ্গ এবং নিরপেক্ষ আকারে গঠিত হয় বিভিন্ন বাক্য।

হয়তো অনেকেই এখন ভাবছেন সংস্কৃত ভাষা মানেই কেবল হিন্দু ধর্মেরই গুরুত্বপূর্ণ একটি ভাষা! যা পুরোপুরি ভুল ধারণা। একটা সময় এই ভাষা কিন্তু জৈন এবং বৌদ্ধ ধর্মের পণ্ডিতদের দ্বারাও ব্যবহার করা হয়েছে। পরবর্তীতে প্রয়োজনীয়তা এবং জনপ্রিয় দু’টো কারণেই ভারতের সংবিধানে এটিকে একটি ধ্রুপদী ভাষা এবং সরকারি ভাষা উভয় হিসাবে স্বীকৃত করা হয়েছে। 

এছাড়াও আপনি হয়তো জেনে অবাক হবেন প্রাচীন ভারতে সংস্কৃত শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষিত হয়ে উঠা সমাজকে উচ্চসমাজের স্থানে রেখে সম্মানিত করা হতো। সে-সময় শিক্ষার মূল ভাষা এবং শিক্ষিত হওয়ার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা ভাষা মানেই ছিলো সংস্কৃত ভাষা। যা থেকে সংস্কৃত ভাষার সমৃদ্ধ ইতিহাস সম্পর্কে বিপুল ধারণা অর্জন করা যায়। 

তবে এও ঠিক যে সংস্কৃত ভাষার ইতিহাস সম্পর্কে জানার পাশাপাশি আমাদের লোকসাধারণে প্রচলিত প্রাকৃত ভাষার ব্যাপারটি সম্পর্কেও জেনে রাখা উচিত। কথ্যরীতিতে সে-সময় প্রাকৃত ভাষা প্রচলিত থাকলেও লেখ্যরীতি কিংবা পড়াশোনায় ব্যবহৃত ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হতো সংস্কৃত ভাষা। 

সেই রেশ ধরে বর্তমানে সংস্কৃত ভাষাকে সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এবং প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে..এমনকি মিডিয়ার পাশাপাশি সাময়িকী, রেডিও, টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্রেও ব্যবহার করা হচ্ছে। 

তবে বর্তমান কিংবা অতীত যে কালের কথাই বলি না কেনো, সংস্কৃত ভাষা কিন্তু বেশ সমৃদ্ধ হয়ে বেড়েই উঠেছে এবং বয়স্ক হয়েছে। এই সমৃদ্ধতা ভাষাটির প্রতি সৃষ্টি করেছে বাড়তি আগ্রহ, বাড়তি ভালোবাসা এবং বাড়তি চর্চা। 

সংস্কৃত ভাষার ব্যবহার

সামবেদ, যজুর্বেদ, অথর্ববেদ, ব্রাহ্মণ এসব গ্রন্থগুলিতে খুব সাবলীলভাবেই সংস্কৃত ভাষাকে ব্যবহার করা হয়েছে। যারা সংস্কৃত ভাষা বুঝে তাদের জন্যে এসব সামবেদ, যজুর্বেদ, অথর্ববেদ, ব্রাহ্মণ এসব গ্রন্থগুলি যেনো এক একটি হীরের টুকরো। গুণগত দিক দিয়ে পুরোপুরি ঠিকঠাক এসব গ্রন্থ উপভোগ করতে হলে সরাসরি কিনে নেওয়া কিংবা অনলাইন পিডিএফের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। 

প্রাচীনকালে বৈদিক ধর্মের ব্যাপক লিটারজিকাল কাজের ভাষা হিসেবে সংস্কৃত ভাষাকে ব্যবহার করা হতো। সে-সময় এই ভাষাটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হতো বৌদ্ধ ধর্মের বিভিন্ন গ্রন্থে এবং প্রাচীনকালে রচিত বিভিন্ন সাহিত্যিক নথিপত্র সহ সম্পর্কিত অন্যান্য লেখালেখিতে।

এছাড়াও সংস্কৃত ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্র হিসেবে বৈদিক সাহিত্যের কথা একেবারে না বললেই নয়। ও হ্যাঁ…! যেহেতু আমাদের আজকের এই সংস্কৃত ভাষার ইতিহাস সম্পর্কিত আর্টিকেলে আমরা বারবার বৈদিক ভাষা বা বৈদিক সাহিত্যের কথা বলছি সেহেতু এর মানে নিয়েও বিভিন্ন কনফিউশান দূর করা উচিত। 

মূলত বৈদিক সাহিত্য হলো এমন একটি ক্ষেত্র আত্মায় আশাবাদী সম্পর্কিত বিভিন্ন লেখালেখি থাকে। অর্থ্যাৎ ক্ষেত্রটির প্রতিটি লেখার থিম হিসেবে ব্যবহৃত হয় আত্মায় আশাবাদীর ব্যাপারটি। সাধারণ মনোবিজ্ঞানের যে মৌলিক বিষয়গুলি রয়েছে সবগুলির পাশাপাশি সম্পর্কিত সকল বিষয়াদিকে সংস্কৃত ভাষায় বৈদিক সাহিত্যে খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়ে থাকে। 

সংস্কৃত ভাষার বর্তমান পরিস্থিতি 

সংস্কৃত ভাষার বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে যদি বলি তাহলে বলবো এই ভাষাটিকে নিয়ে এখনো হিন্দু, বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্মের বাড়তি শ্রদ্ধাবোধের ব্যাপার নিয়ে। বৌদ্ধ ধর্মের ক্ষেত্রে এই ভাষাটিকে আবশ্যিকভাবে বিভিন্ন মঠে ব্যবহার করা হয়। শুধু তাই নয়, এর পাশাপাশি সংস্কৃত ভাষার ব্যবহার চলে বৌদ্ধদের ধর্মীয় গ্রন্থ অর্থ্যাৎ তিব্বতি ক্যাটাগরির গ্রন্থে এবং এতে থাকা সূত্রগুলিতে। আর সবশেষে জৈন ধর্মের কিছু সম্মানিত গ্রন্থে সংস্কৃত ভাষা ব্যবহার করা আছে এবং বর্তমানে তা বেশ সম্মানের সাথেই ভক্তি করে সংশ্লিষ্ট জনেরা। 

 

ইতি কথা

আশা করি সংস্কৃত ভাষার ইতিহাস সহ এ-সম্পর্কিত যাবতীয় সকল তথ্য পুরোপুরিভাবে জানাতে পেরেছি। যারা ভাষার প্রতি প্রচন্ডভাবে দূর্বল তারা কিন্তু এই সংস্কৃত ভাষা নিয়ে রিসার্চ করতে পারেন। এতে করে সময়টা যেমন ভালো কাটবে, ঠিক তেমনই তৈরি হবে ভাষা নিয়ে বাড়তি অভিজ্ঞতা। যা আপনার ব্যাক্তিত্বকে ফুটিয়ে তুলতে সাহায্য করবে এবং স্কিলের খাতায় যোগ করবে আরো একটি ক্ষেত্র। 

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *