সংস্কৃত ভাষা কি এবং এ-সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য

সংস্কৃত ভাষা কি

আপনি হয়তো জানেন না বর্তমান আধুনিক কম্পিউটারের ক্ষেত্রে সংস্কৃত ভাষা বেশ গুরুত্বের সাথে বিবেচিত হচ্ছে! ব্যাপারটি অবাক করার মতো হলে এর পুরোপুরি সত্যতা রয়েছে। এক্ষেত্রে কম্পিউটারে সংস্কৃত ভাষার গুরুত্ব বিবেচিত হওয়ার অনেকগুলি কারণের মাঝে অন্যতম কারণ হলো সংস্কৃত ভাষায় ভগ্নাংশের জন্য আলাদা শব্দ ব্যবহার করার ব্যাপারটি। এভাবে শব্দ ব্যবহারের কারণে ব্যবহারকারীদের মাঝে বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি দূর হয়। সে যাইহোক! এই যুগে এসেও যেখানে সংস্কৃত ভাষার গুরুত্ব এতোটুকু কমেনি সেখানে আমাদের উচিত এই ভাষাটি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে রাখা। যথাসম্ভব রিসার্চ করা। তারই অংশ হিসেবে সংস্কৃত ভাষা কি এবং এ-সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য নিয়ে সাজানো হয়েছে আমাদের আজকের এই আর্টিকেল। সাথেই থাকুন।

সংস্কৃত ভাষা কি?

ঐতিহাসিক ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা এবং হিন্দু ও বৌদ্ধধর্মের পবিত্র দেবভাষা হলো এই সংস্কৃত ভাষা। যা ভারত দেশে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে প্রচলিত রয়েছে। ভারতের মোট যে ২২ টি সরকারি ভাষা ব্যবহার করা হয়, সে ২২ টি সরকারি ভাষার মাঝে এই সংস্কৃত ভাষা হলো অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং অধিক হারে ব্যবহৃত একটি ভাষা। আশা করি সংস্কৃত ভাষা কি এবং এই ভাষা কোন দেশে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে ব্যবহৃত সে-সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। 

প্রাচীন ও মধ্যযুগে এই সংস্কৃত ভাষার অধিক প্রচলন লক্ষ্য করা যায়। শুরুতে এই ভাষার মৌখিক রূপ থাকলেও লিখিত কোনো রূপ ছিলো না। পরবর্তীতে যখন এই ভাষাটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে এবং এই ভাষাটি ধীরে ধীরে অন্য ভাষারও জন্ম দিতে সাহায্য করে ঠিক তখন থেকেই এর লিখিত রূপের প্রয়োজনীয়তা পূরণে সকলে সচেষ্ট হয়ে উঠে। 

সংস্কৃত ভাষার বৈশিষ্ট্য কি কি? 

সংস্কৃত ভাষা কি সে-সম্পর্কে তো জানলেন! এবারে আমরা জেনে নিবো দক্ষিণ এশিয়ার প্রাচীন এই ইন্দো-আর্য ভাষা খ্যাত সংস্কৃত ভাষার বৈশিষ্ট্যগুলি কি কি! কিংবা ঠিক কোন কোন বিষয়গুলির দিকে তাকালে বোঝা যাবে যে এটি একটি সংস্কৃত ভাষার বর্ণ, শব্দ কিংবা বাক্য। সংস্কৃত ভাষার বৈশিষ্ট্যগুলি হলো:

মনে রাখবেন সংস্কৃত ভাষাতে কিন্ত অতি হ্রস্ব ‘অ’ এবং হ্রস্ব ‘এ’, ‘ও’ নেই। যা সাধারণত বাংলা ভাষাতে যথেষ্ট পরিমাণে লক্ষ্য করা যায়। সুতরাং অতি হ্রস্ব ‘অ’ এবং হ্রস্ব ‘এ’, ‘ও’ ছাড়া সাধারণ হ্রস্ব ‘অ’ এবং হ্রস্ব ‘এ’, ‘ও’ থাকলে একে সংস্কৃত ভাষার অংশ হিসেবে ধরে নেওয়া যায়। 

সে-সময় অর্থ্যাৎ প্রাচীনকালে সংস্কৃত ভাষায় সঙ্গীতাত্মকের ব্যপারটি সবচেয়ে বেশি পরিমাণে লক্ষ্য করা যেতো। যদিও পরবর্তীকালে এসে এই সঙ্গীতাত্মক স্বরের ব্যবহার বিলুপ্ত হতে শুরু করে এবং বর্তমানের সংস্কৃত ভাষাতেও এর সঙ্গীতাত্মক স্বরের রেশ রয়ে গেছে। 

মনে রাখবেন সংস্কৃত ভাষাতে কিন্তু যুক্ত ব্যঞ্জনের ব্যবহার অনেক বেশি পরিমাণে লক্ষ্য করা যায়। অর্থ্যাৎ সংস্কৃত ভাষা চেনার আরো একটি বৈশিষ্ট্য হলো এতে থাকা অতিরিক্ত যুক্তবর্ণ। এছাড়াও সংস্কৃত ভাষাতে স্বরবর্ণের গুণ, বৃদ্ধি ও সম্প্রসারণও লক্ষ্য করা যায়। 

সংস্কৃত ভাষা যদি লক্ষ্য করেন সেক্ষেত্রে দেখবেন এতে উপসর্গের স্বাধীন ব্যবহারও প্রচুর পরিমাণে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পাশাপাশি এতে রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে সন্ধির ব্যবহার৷ 

সাধারণ বাংলা ভাষার মতো কিন্তু সংস্কৃত ভাষায় সমাস ব্যবহৃত হতো না! সংস্কৃত ভাষায় ব্যবহার করা সমাসের ধরণ ছিলো অধিক পরিমাণে বৈচিত্র্যময়। সুতরাং সাধারণ বাংলায় ব্যবহৃত সমাস থেকে কিছু আলাদা ধাঁচের সমাস লক্ষ্য করলেই এতে সংস্কৃত ভাষার অংশ হিসেবে ধরে নেওয়া যেতে পারে। 

সংস্কৃত ভাষার উদাহরণ কি কি? 

সংস্কৃত ভাষা কি এবং এ-সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য নিয়ে সাজানো আজকের আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আলোচনা করবো সংস্কৃত ভাষার উদাহরণ সম্পর্কে। এতে করে সংস্কৃত ভাষা চিনতে আপনার কিছুটা হলেও সুবিধা হবে। এক্ষেত্রে আমরা কমন কিছু সংস্কৃত শব্দ সম্পর্কে জানবো। 

মূলত ফলের মাঝে জনপ্রিয় ফল তরমুজের নামটি এসেছে সংস্কৃত ভাষা থেকে। যা এখনো কোনোরূপ পরিবর্তিত হয় নি। এছাড়াও বিশেষ্য হিসেবে দস্যু, মেঘমালা, দিকচক্রবাল, কুবেরপুরী (যক্ষদের নগরী) ইত্যাদি শব্দ হলো এক একটি জনপ্রিয় সংস্কৃত শব্দ। 

ভাষাতত্ত্বের ইতিহাসে সংস্কৃত ভাষার গুরুত্ব কতটুকু? 

কেবল সংস্কৃত ভাষা কি সে-সম্পর্কে জানলেই হবে না। এর পাশাপাশি আমাদের বাংলাদেশের ভাষাতত্ত্বের ইতিহাসে সংস্কৃত ভাষার গুরুত্ব সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। এই ভাষাটির গুরুত্ব কতটুকু সে-ব্যাপারেও জানা প্রয়োজন! 

তবে তার আগে বলে নিই এই সংস্কৃত ভাষা কিন্তু বেশ আত্মনির্ভরশীল একটি ভাষা। যার খুব একটা অন্য ভাষার কোনো অংশ ধার করবার প্রয়োজন পড়ে না। উপরন্তু ভাষাটি নিজের যা আছে তা দিয়েই নতুন নতুন শব্দের জন্ম দেয়। সংস্কৃত ভাষার গুরুত্বকে বুঝতে হলে শুরুতে আপনাকে কম্পিউটারের জন্য সেরা ভাষা হিসাবে সংস্কৃত ভাষাকে বিবেচনা করার গুরুত্ব বুঝতে হবে। 

বাংলা ভাষায়ও নানাভাবে সংস্কৃত ভাষা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যদি আপনি কোনো কারণে সংস্কৃত ভাষার প্রতিটি শব্দকে বাংলা থেকে বাদ দিতে চান সেক্ষেত্রে দেখবেন অসংখ্য শব্দ ব্যবহারের অনুমতি হারাতে হচ্ছে। সবমিলিয়ে ভাষাগত দিক দিয়ে বাংলা সংস্কৃত ভাষা ছাড়া পুরোপুরি অসহায়! যদিও বাংলা ভাষার স্বতন্ত্রতাকেও আপনার এড়িয়ে চলতে পারি না। 

সংস্কৃত ভাষার ইতিহাস কি?

বর্তমান আধুনিক সংস্কৃত ভাষার আদি ভাষাভাষীগণ খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দের প্রথম ভাগে উপমহাদেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন। পরবর্তীতে তাদের পরের প্রজন্মের হাত ধরেই বেড়ে উঠে আজকের এই সংস্কৃত ভাষা। গবেষণা বলছে শুরুর দিকে এই সংস্কৃত ভাষা ছিলো বাল্টিক ও স্লাভিক ভাষার সঙ্গে ইন্দো-ইরানীয় ভাষার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের সাথে সৃষ্টি হওয়া একটি ভাষা।

সে-সময় সংস্কৃত ভাষার উপর সাহিত্যচর্চার প্রচলন ছিলো। যার প্রমাণসরূপ সামবেদ, যজুর্বেদ, অথর্ববেদ, ব্রাহ্মণ নামক বইগুলির দিকে লক্ষ্য করা যায়। এছাড়াও সংস্কৃত ভাষার যে প্রধান রূপ রয়েছে সেটি পরিলক্ষিত হয় হিন্দু মহাকাব্য রামায়ণ ও মহাভারত নামক গ্রন্থগুলিতে। আপনি হয়তো জেনে খুশি হবেন যে প্রাচীন ভারতে সেই সমাজকেই শিক্ষিত সমাজ বলা হতো যে সমাজ সংস্কৃত শিক্ষার মাধ্যমে নিজেরা শিক্ষিত হতো! সে-সময় বিদ্যাচর্চা মানেই ছিলো সংস্কৃত ভাষা। 

আধুনিক যুগে সংস্কৃত ভাষার পরিস্থিতি কেমন? 

যারা হিন্দু, বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্মে বিশ্বাস করেন তারা প্রত্যেকেই সংস্কৃত ভাষাকে শ্রদ্ধা করেন। সুতরাং আধুনিক যুগে সংস্কৃত ভাষার পরিস্থিতি হিসেবে যদি বলি সেক্ষেত্রে বলবো হিন্দু, বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্মে বিশ্বাসীদের এই ভাষাটিকে যথেষ্ট শ্রদ্ধার সাথে ব্যবহারের ব্যাপারটি। এসব ধর্মের যে মূল ধর্মীয় গ্রন্থ রয়েছে তার প্রতিটি গ্রন্থেই অন্যান্য ভাষার পাশাপাশি সংস্কৃত ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। 

সংস্কৃত ভাষা শেখার উপায় কি কি? 

যারা সংস্কৃত ভাষক ঘরে বসেই শিখে নিতে চান তারা Sanskrit Self Teacher নামক বইটিকে ফলো করতে পারেন। এই বইটিতে সহজ পদ্ধতিতে সংস্কৃত ভাষা শেখার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত দেওয়া আছে। সেই সাথে রয়েছে বিভিন্ন পাঠ। যা ফলো করতে পারলে আপনিও এই ভাষাটিকে আয়ত্ত করে ফেলতে পারবেন। 

সংস্কৃত ভাষা শেখার ক্ষেত্রে কোর্স হিসেবে সংস্কৃতভারতীর বিনামূল্যের সংস্কৃত কথোপকথনের পাঠক্রমে (কোর্স) ভর্তি হতে পারেন। এই কোর্সটি করতে হলে আপনাকে প্রতিদিন ২ ঘন্টা করে সময় দিতে হবে। আর টানা ১০ দিন ধরে এই কোর্সের ক্লাস পরিচালিত হয়ে থাকে। 

ইতি কথা

আশা করি আমাদের আজকের এই এক আর্টিকেলেই আপনি সংস্কৃত ভাষা কি এবং এ-সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি সম্পর্কে জেনে নিতে পেরেছেন। যা আপনাকে কিছুটা হলেও উপকৃত করবে। শেঁকড়ের ভাষার প্রতি আমাদের ভালোবাসা জেগে উঠুক। বাড়ুক শ্রদ্ধাবোধ! এই কামনা রেখে আজকের মতো বিদায় নিচ্ছি। ভালো থাকুন। ভাষার প্রতি সচেষ্ট থাকুন। 

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *